প্রশ্ন: আমি যখন উমরা করতে এসেছি তখন আমি হায়েযগ্রস্ত ছিলাম। এমতাবস্থায় আমি সাঈ আদায় করেছি এবং চুল কেটে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেছি ও নিকাব পরেছি। এরপর পবিত্র হওয়ার অপেক্ষা করেছি। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ করেছি। এটি আমি করেছি হজ্জের উপর ভিত্তি করে যে হায়েযগ্রস্ত নারী তাওয়াফ ছাড়া সবকিছু করতে পারবে। উল্লেখ্য, আমি অবিবাহিত। আপনাদের অভিমত কী; বারাকাল্লাহু ফিকুম।
উত্তর : আলহামদু লিল্লাহ। আপনার হায়েয সত্ত্বেও মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে আপনি সঠিক কাজটি করেছেন। হায়েয ও নিফাস অবস্থায় ইহরাম সঠিক হওয়ার দলিল হল আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এর হাদিস: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যুল হুলাইফাতে (মদিনার মীকাতে) পৌঁছেন তখন তিনি সন্তান প্রসব করেছেন এবং তিনি হজ্জ করতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চেয়ে পাঠান: আমি কিভাবে কী করব? তিনি বললেন: “আপনি গোসল করুন, একটি কাপড়ের পট্টি বাঁধুন এবং ইহরাম করুন”।[সহিহ মুসলিম (১২১৮)]
অনুরূপভাবে হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ না করে আপনি ঠিক করেছেন। আয়েশা (রাঃ) হজ্জের উমরাকালীন সময়ে (তিনি তামাত্তু হজ্জকারিনী ছিলেন) যখন হায়েযগ্রস্ত হয়েছেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন: “একজন হাজী যা যা করে তুমিও তা তা কর। তবে, পবিত্র হওয়া অবধি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করবে না।”[সহিহ বুখারী (১৬৫০) ও সহিহ মুসলিম (১২১১)]
তবে, আপনি তাওয়াফের আগে সাঈ ও চুল কেটে ভুল করেছেন। কেননা অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, তাওয়াফের আগে সাঈ করা হজ্জের জন্য খাস; উমরার জন্য নয়। এ কারণে আয়েশা (রাঃ) যখন হায়েযগ্রস্ত ছিলেন তখন তিনি উমরার সাঈ করেননি। আর ইহরাম থেকে হালাল হওয়া ও চুল কাটা তাওয়াফ ও সাঈ উভয়টি শেষ করার পর হবে। এর আগে হালাল হওয়া নিষিদ্ধ; যা করলে ফিদিয়া দিতে হয়।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ) বলেন: গ্রন্থকার (রহঃ) তাওয়াফের পর সাঈ উল্লেখ করেছেন। সাঈর আগে তাওয়াফ থাকা কি শর্ত? জবাব হচ্ছে- হ্যাঁ; শর্ত। যদি কেউ তাওয়াফের আগে সাঈ করে তার উপর তাওয়াফের পরে পুনরায় সাঈ করা ওয়াজিব। কেননা সাঈ সেটার নির্ধারিত সময়ে আদায় হয়নি।
যদি কেউ বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সনদে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে; এক লোক বলেন: আমি তাওয়াফ করার আগে সাঈ করেছি। তিনি বলেছেন: ‘আপনি করে যান; এতে কোন অসুবিধা নাই।’ এর জবাব হচ্ছে- এটি হজ্জের ক্ষেত্রে; উমরার ক্ষেত্রে নয়।
যদি বলা হয়: হজ্জের ক্ষেত্রে যা সাব্যস্ত উমরার ক্ষেত্রেও তা সাব্যস্ত; যদি না বিশেষ কোন দলিল থাকে। কেননা তাওয়াফ-সাঈ হজ্জ ও উমরা উভয় ক্ষেত্রে রুকন? জবাব হচ্ছে- এটি ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও কিয়াস করা। কেননা উমরার আমলের বিন্যাস নষ্ট করলে গোটা আমলটাই নষ্ট হয়ে যায়। কেননা উমরার মধ্যে তাওয়াফ, সাঈ এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটা ছাড়া আর কিছু নাই। কিন্তু হজ্জের কার্যাবলীর বিন্যাস নষ্ট হলে এতে হজ্জের উপর কোন প্রভাব পড়ে না। কেননা হজ্জের পাঁচটি কর্ম এক দিনে করা হয়। তাই এ ব্যাপারে হজ্জের উপর উমরাকে কিয়াস করা ঠিক হবে না।
মক্কার আলেম আতা বিন আবু রাবাহ (রহঃ) থেকে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি উমরার তাওয়াফের আগে সাঈ করাকে জায়েয বলেছেন এবং অন্য কিছু আলেমও এমনটি বলেছেন।
কোন কোন আলেমের মতে, যদি কেউ ভুলে কিংবা না-জানার কারণে করে তাহলে জায়েয হবে; জানা থাকা ও স্মরণে থাকার পরে কেউ করলে জায়েয হবে না।[আশ-শারহুল মুমতি (৭/২৭৩)]
শাইখ বিন বায (রহঃ) এর অভিমত হচ্ছে: হজ্জের ন্যায় উমরাতেও তাওয়াফের আগে সাঈ করা সঠিক।
তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, বিদায় হজ্জের সময় কোরবানীর দিনের কার্যাবলী: কংকর নিক্ষেপ করা, কোরবানী করা, মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল কাটা, তাওয়াফ করা, সাঈ করা ইত্যাদি আগে বা পরে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেছেন: “কোন অসুবিধা নেই”।
এই জবাবটি ছিল সাধারণ জবাব; এর মধ্যে হজ্জ-উমরা উভয়টির মধ্যে তাওয়াফের আগে সাঈ করা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একদল আলেম এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এর সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় আবু দাউদ কর্তৃক সহিহ সনদে সংকলিত উসামা বিন শারীক (রাঃ) এর হাদিসে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওয়াফের আগে যে ব্যক্তি সাঈ করে ফেলেছেন তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “অসুবিধা নাই”। এ জবাবটি হজ্জ ও উমরা উভয়টিকে শামিল করে। অন্য কোন সহিহ ও পরিস্কার দলিলে এর কোন বাধা পাওয়া যায় না। কিন্তু সতর্কতাস্বরূপ, মতভেদের ঊর্ধ্বে থাকার জন্য এবং হজ্জ-উমরা পালনে হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলের অনুকরণ করার জন্য তাওয়াফের পর পুনরায় সাঈ আদায় করাও শরিয়তসম্মত হবে।
আর তাকী উদ্দিন (রহঃ) থেকে যা বর্ণিত আছে: “সাঈ তাওয়াফের পরে হওয়া মতৈক্যপূর্ণ বিষয়” এর ব্যাখ্যা এভাবে করতে হবে যে, এটি উত্তম হওয়ার ক্ষেত্রে মতৈক্যপূর্ণ বিষয়। কিন্তু পরে না হলেও চলে কিনা সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে; ইতিপূর্বে আমরা যে মতভেদের দিকে ইঙ্গিত করেছি। আলেমগণের মধ্যে ‘মুগনী’ কিতাবের গ্রন্থাকার পরিস্কারভাবে সেটা উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তিনি আতা (রহঃ) থেকে সাধারণভাবে (আগপিছ করা) জায়েয মর্মে উদ্ধৃত করেছেন এবং যে ব্যক্তির মনে নাই তার ক্ষেত্রে (জায়েয মর্মে) ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত এক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।[ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১৭/৩৩৯)]
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তাওয়াফের আগে সাঈ করা জায়েয হবে কিনা; সেটা হজ্জের ক্ষেত্রে হোক কিংবা উমরার ক্ষেত্রে? জবাবে তিনি বলেন: সুন্নত হচ্ছে- তাওয়াফ আগে করা। তারপর সাঈ করা। যদি অজ্ঞতাবশতঃ তাওয়াফের আগে সাঈ করে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে: “এক লোক তাঁকে প্রশ্ন করে বলে: আমি তাওয়াফ করার আগে সাঈ করে ফেলেছি। তিনি বলেন: কোন অসুবিধা নাই”। এতে প্রমাণিত হয় যে, যদি কেউ আগে সাঈ করে তাহলে সেটা জায়েয হবে। তবে সুন্নতসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে- তাওয়াফ করে তারপর সাঈ করবে। এটি হজ্জ ও উমরা উভয় ক্ষেত্রেই সুন্নাহ।[ফাতাওয়া বিন বায (১৭/৩৩৭)]
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে: যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশতঃ তাওয়াফের আগে সাঈ করে ফেলেছে তার বিষয়টি ক্ষমার্হ।
তবে আপনি যে, তাওয়াফ করার আগে চুল কেটে ফেলেছেন: সেটি নিষিদ্ধ কর্ম; যা পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, আপনার উপর কোন ফিদিয়া আবশ্যক নয়। যেহেতু আপনি বিধানটি জানতেন না। এখন আপনার উপর চুল কাটা আবশ্যক।
আর যদি আপনি মক্কায় ফিরে গিয়ে তাওয়াফ করে, এরপর সাঈ করে, এরপর চুল কেটে হালাল হতে পারেন তাহলে সেটা অধিক উত্তম ও অধিক সতর্কতাপূর্ণ। যাতে করে আপনি আপনার ইহরাম থেকে ইয়াকীনের সাথে হালাল হতে পারেন। এবং পরিপূর্ণ পন্থায় উমরাটি পালন সমাপ্ত করতে পারেন।
যদি সেটা সম্ভবপর না হয় তাহলে এখনই আপনি আপনার চুল কাটুন। ইনশা আল্লাহ্ আপনার উমরা সহিহ।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব