যে ব্যক্তি প্রথম হালালের পর তাওয়াফে ইফাযার আগে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে

প্রশ্ন : এক হজ্জ আদায়কারী জমরায়ে আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা, মাথা মুণ্ডন করা ও ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার পর; কিন্তু তাওয়াফে ইফাযার আগে নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। এ ব্যক্তির হজ্জ কি সহিহ? তাকে কি দম (পশু জবাই) দিতে হবে? যদি তার উপর ফিদিয়া ওয়াজিব হয় তাহলে সেটা কি তাকে মক্কাতেই জবাই দিতে হবে; নাকি যে কোন স্থানে, যে কোন সময় জবাই দেওয়া যাবে? আশা করি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পরিস্কার করবেন। আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর : আলহামদু লিল্লাহ। যে ব্যক্তি প্রথম হালালের পর, তাওয়াফে ইফাযার আগে স্ত্রী সহবাস করেছে এর মাধ্যমে তার হজ্জ নষ্ট হবে না। কিন্তু, এর মাধ্যমে সে ব্যক্তি পাপে লিপ্ত হয়েছে; তার উপর তওবা করা ও এ পাপ ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করা আবশ্যক। সে হারাম এলাকার বাহিরে গিয়ে সেখান থেকে নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে এসে তাওয়াফে ইফাযা করবে। অনুরূপভাবে তার উপর একটি ভেড়া/ছাগল জবাই করে সেটি হারামের গরীব লোকদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া আবশ্যক; জবাইকৃত পশুর গোশত থেকে সে ব্যক্তি নিজে খেতে পারবে না।

তার স্ত্রীও যদি তার সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকে এবং সহবাসের ক্ষেত্রে অনুগত থাকে তাহলে তার উপরেও অনুরূপ বিষয়গুলো আবশ্যক হবে। যদি স্বামী তার সাথে জবরদস্তি করে থাকে তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।

“আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা” গ্রন্থে (২/১৯২) এসেছে যে:

“আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, প্রথম হালালের পর সহবাস করলে হজ্জ নষ্ট হবে না।… তবে এর প্রতিকার কী এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। হানাফী, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমদের মতে, তার উপর একটি ভেড়া/ছাগল জবাই করা আবশ্যক। তারা এর পক্ষে দলিল দিতে গিয়ে বলেন: ‘যেহেতু স্ত্রী-সহবাস ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে বৈধতা অর্জিত হওয়ার কারণে এর অপরাধের মাত্রা হালকা’।

ইমাম মালেক বলেন; এবং এটি শাফেয়ি ও হাম্বলীদেরও একটি উক্তি যে: তার উপর একটি উট জবাই করা ওয়াজিব। ‘আল-বাজি’ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, যেহেতু ইহরামের উপর এর অপরাধের মাত্রা জঘন্য।

যে ব্যক্তি প্রথম হালালের পর ও তাওয়াফে ইফাযার আগে এই গুনাহতে লিপ্ত হয়েছেন ইমাম মালেক ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উক্তির ভিত্তিতে তার উপর ‘হারাম এলাকা থেকে বেরিয়ে গিয়ে হালাল এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে এসে উমরা করা ওয়াজিব বলেছেন’…। তবে হানাফী ও শাফেয়ী মাযহাবের আলেমগণ সেটাকে ওয়াজিব বলেননি।”[সমাপ্ত]

শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (রহঃ) বলেন:

“হালাল হওয়ার পর সহবাস করলে হজ্জ নষ্ট হবে না; সেটা ইফরাদ হজ্জ হোক কিংবা ক্বিরান হজ্জ হোক। শুধু ইহরাম নষ্ট হবে। অর্থাৎ তার জন্য তাওয়াফে ইফাযা করা সহিহ হবে না; যদি না সে হারাম এরিয়া থেকে বেরিয়ে গিয়ে হালাল এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কাতে প্রবেশ করে একটি শুদ্ধ ইহরামে তাওয়াফে ইফাযা পালন করেন; যে ইহরামের ক্ষেত্রে হালাল এরিয়া ও হারাম এরিয়া দুটোর সমন্বয় করা হয়েছে।

তার উপর হারাম এলাকায় একটি ভেড়া/ছাগল জবাই করে সেটা মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া ওয়াজিব; সে ব্যক্তি নিজে এর থেকে খেতে পারবে না। এবং তার স্ত্রীর উপরও একটি ভেড়া/ছাগল জবাই করা ওয়াজিব হবে; যদি স্ত্রী অনুগত হয়ে করে থাকে। আর যদি স্ত্রী জবরদস্তির শিকার হয়ে করে থাকে তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলি মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (৫/২০৩-২০৪)]

শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

এক ব্যক্তি তাওয়াফে ইফাযার আগে সহবাস করেছে; ইতিমধ্যে সে কংকর নিক্ষেপ করেছে ও মাথা মুণ্ডন করেছে; তার উপর কী করা আবশ্যক?

জবাবে তিনি বলেন: “একটি ফিদিয়া জবাই করে সেটা গরীবদের মাঝে বণ্টন করা…। হালাল এলাকা থেকে তাওয়াফ করার জন্য ইহরাম বেঁধে আসা ছাড়া আর কিছু আবশ্যক হবে না।”[সমাপ্ত][লিকাউল বাব আল-মাফতুহ (১৭/৯০)]

যদি ইহরাম নবায়ন করার জন্য হালাল এরিয়ায় না যায় সেক্ষেত্রেও আমরা আশা করছি যে, তার তাওয়াফ সহিহ হবে। শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে: এক লোক তাওয়াফে ইফাযা করেনি। সে তার দেশে ফিরে গেছে, স্ত্রী সহবাস করেছে; তার উপর কী বর্তাবে? জবাবে তিনি বলেন: তার উপর আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করা ওয়াজিব। তার উপর একটি পশু জবাই করে মক্কার গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া ওয়াজিব। তার উপর ওয়াজিব মক্কায় ফিরে গিয়ে তাওয়াফে ইফাযা করা। কেননা তাওয়াফে ইফাযার আগে স্ত্রী সহবাস করা নাজায়েয। এতে করে তার উপর একটি পশু জবাই করা ওয়াজিব। সঠিক মতানুযায়ী এ ক্ষেত্রে একটি ভেড়া/ছাগল জবাই করা যথেষ্ট কিংবা উট বা গরুর সাত ভাগের একভাগ।[সমাপ্ত][মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১৭/১৮০)]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *