বসতভিটার জমি নিয়ে দীর্ঘশত্রুতার জেরে হামলা-মামলার ভয়ে ঈদে বাড়িতে যেতে না পারার অভিযোগ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী। রোববার ঈদের দিনেও তার ভাইদের মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এঘটনায় তার বড়ভাই বাদি হয়ে থানায় মামলা করায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে, এ মামলার অন্যতম এক বিবাদী বিষয়টিকে অস্বীকার করে জানান ঈদের দিন কোনো মারামারির ঘটনাই ঘটেনি। তবে তাদের সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম শান্ত রাবির গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডি ইউনিয়নের রসিদাবাদ গ্রামে। তার পিতা কাজি মো. নুরুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য।Raর
এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দীর্ঘদিন দিন ধরে আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার বাবার পৈতৃক সম্পত্তির উপর আমাদের ঘর করা আছে। তারা বিভিন্নভাবে ২০০৮ সাল থেকে প্রভাব খাটিয়ে হয়রানি করে আমাদের বাড়ি দখলের চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। গত ১৪ জুন গভীর রাতে তারা আমাদের বাড়িতে হামলা করে এবং বাড়ির সামনের টিনের বেড়া উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাসায় শুধু আমার ভাই আর ভাবি ছিল। আমার ভাইকে হত্যার হুমকিও দেয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীরা এদের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এদের ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনীও রয়েছে। গত ২৪ জুন ভোটার হতে গেলে আমাকেও হামলা করার চেষ্টা করে এবং উল্টো আমার নামেই অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ভয়ে আমি ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি। রাজশাহীতেই ঈদ কাটালাম। রোববার পবিত্র ঈদের দিন আমার দুই ভাইকে ওরা ৫-৬ জন ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে মারধর করিয়েছে। পরে আমরা থানায় মামলা করি। পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে এসেছিলেন। এখন আমার পরিবার আরও ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
এবিষয়ে ঈদের দিন করা মামলার অন্যতম আসামি মো. লোকমান (৪৫) বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে অন্ধ। আর ওরা সবল এবং চালাক মানুষ। গতকাল ছিলো ঈদের দিন। ঈদের দিনে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে ক্ষমা করে দেয়, বুকে বুক মিলায়, মারামারি করে না। গতকাল কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। মূল ঘটনা হচ্ছে, আমার বাবার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য নুরুল ইসলাম অনেক আগে থেকে পায়তারা করে আসছে। আব্দুর রাজ্জাক কাজী বাড়ির এমন কোনো পরিবার নাই, যাদের সাথে ওর বিবাদ হয় নাই।
তিনি আরো বলেন, নুরুল ইসলামের চাচার থেকে আমার বাবা জমি কিনেছিলো। সেই জমিতে আমি বাড়ি বানিয়েছি। এরপাশে ওর বাড়ি। জমিটা এখন একটু দামি হয়ে গেছে। আর আমার দুইটা মেয়ে আছে, কোনো ছেলে সন্তান নাই। এজন্য সে জমিটা জবরদখল করার জন্য বা আমি যেনো ছেড়ে দিয়ে আসি, সেজন্য পায়তারা করছে। এ বিষয়ে এসিল্যান্ড অফিসে একটা মামলা চলমান আছে। এছাড়া, গত ফেব্রুয়ারি মাসে নুরুল ইসলাম ও তার দুই ছেলে মিলে আমাকে, আমার স্ত্রী এবং এক ভাইয়ের বউকে মেরেছিলো। এ বিষয়ে থানায় একটা অভিযোগও দিয়েছিলাম, পরে সেটা উঠিয়ে করে নিয়েছি। ভেবেছিলাম, প্রতিবেশি মানুষ হয়তোবা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ভালো না হওয়ায় আমি আবার কোর্টে একটা মামলা করেছিলাম। এটার তদন্ত প্রতিবেদন থানা থেকে দেওয়া হয়নি।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, এঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই প্রেক্ষীতে মূল আসামি মো. আব্দুস সালামকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কাজ এখনো চলছে। তদন্ত শেষে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে কাজি মো. নুরুল ইসলামের মেজো ছেলে রাকিবুল ইসলাম শাওন প্রশ্নপত্র ফাঁস নিরোধে কুইক ট্রেসিং প্রিন্ট (কিউটিপি) পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। এটা নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে সেসময় খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। শাওন এখন ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন।