জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র : জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন

প্রশ্ন-১. বিবর্তন কি?

উত্তর  : বিবর্তন একটি জৈবিক পদ্ধতি। এর প্রকৃত অর্থ হলো ক্রমবিকাশ। পৃথিবীতে বর্তমানে যত জীব রয়েছে তারা বিভিন্ন সময়ে এ ভূমন্ডলে আবির্ভূত হয়েছে। আবার অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী সময়ের আবর্তে বিলুপ্ত হয়েছে। ডাইনোসর আজ থেকে কয়েক মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে। আবার কোন কোন জীব ধীর গতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে এখনও টিকে আছে।

কয়েক লক্ষ বা হাজার বছর সময়ের ব্যাপকতায় জীব প্রজাতির পৃথিবীতে আবির্ভাব ও টিকে থাকার জন্য যে পরিবর্তন ও অভিযোজন প্রক্রিয়া তাকে জৈব বিবর্তন বলা হয়।

হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টোফেন জে. গোল্ড (১৯৯১) এর মতে ‘Evolution’ পরিপদটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন জার্মান জীববিদ Albrectvon Haller (১৭৭৪)। তিনি বলেন ধীর অথচ ক্রমাগত ও পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কোন সত্ত্বা সরল থেকে জটিল হওয়ার ধারাবাহিক পরিবর্তনই বিবর্তন।

প্রশ্ন-২. লিথাল জিন কী?

উত্তর  : হোমোজাইগাস অবস্থায় কোন জিন বহনকারী জীবের মৃত্যু হলে সে জিনকে লিথাল জিন বলে।

প্রশ্ন-৩. ল্যামার্ক কে ছিলেন?

উত্তর  : ল্যামার্ক ছিলেন একজন দার্শনিক এবং প্রকৃতিবিজ্ঞানী।

প্রশ্ন-৪. ডারউইন কে ছিলেন?

উত্তর  : ডারউইন ছিলেন একজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী।

প্রশ্ন-৫. মেন্ডেলের ১ম সূত্র কী?

উত্তর  : সংকর (hybrid) জীবে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টরগুলো (জিনগুলো) মিশ্রিত বা পরিবর্তিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং জননকোষ সৃষ্টির সময় পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়। একে Law of Segregation বা পৃথকীকরণ সূত্রও বলা হয়।

প্রশ্ন-৬. ডারউইনের মতবাদকে কী বলে?

উত্তর  : ডারউইনের মতবাদকে প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ।

প্রশ্ন-৭. পলিজেনিক ইনহেরিটেন্স কাকে বলে?

উত্তর  : যখন কোনো একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একাধিক জিনের আন্তঃক্রিয়ার ফলে প্রকাশিত হয় তখন তাকে পলিজেনিক ইনহেরিটেন্স বলে।

প্রশ্ন-৮। ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলতে কী বুঝ?

উত্তরঃ জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে জিনের স্থানান্তর ঘটিয়ে যেসব উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয় সেগুলোকে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলে।

প্রশ্ন-৯। টারনার সিন্ড্রোম কী?

উত্তরঃ টারনার সিন্ড্রোম একটি ক্রোমোসোমাল ডিস অর্ডার। সম্পূর্ণ ক্রোমোসোম অথবা ক্রোমোসোমের কিছু অংশ অনুপস্থিত থাকলে এ সমস্যা দেখা দেয়।

প্রশ্ন-১০। জীনতত্ত্ব কাকে বলে?

উত্তরঃ জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, কাজ, বংশপরম্পরায় সঞ্চারণের ধরন ও ফলাফল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে বংশগতিবিদ্যা বা জীনতত্ত্ব বা Genetics বলে।

Genetics শব্দটি গ্রিক শব্দের মূল রূপ gen শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ স্বরূপ ঘটা, উইলিয়াম বেটসন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম Genetics শব্দটি প্রচলন করে।

প্রশ্ন-১১। জিনতত্ত্বের জনক কাকে বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি অস্ট্রিয়াবাসী একজন ধর্যযাজক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মটরশুটি গাছ নিয়ে গবেষণা করে বংশগতি তথা জিনতত্ত্বের যুগান্তকারী দুটি সূত্র প্রদান করেন যা বর্তমানে জিন তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে গণ্য করা হয়। তাই ম্যান্ডেলাকে বংশগতিবিদ্যা তথা জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়।

প্রশ্ন-১২। পরিবৃত্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ ডারউইন লক্ষ করেন যে, যৌন জননে উৎপন্ন দুটি প্রাণী বা প্রাণীগোষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে এক রকম নয়। একই প্রজাতির মধ্যে এমনকি একই পিতা-মাতার সন্তানদের মধ্যেও পার্থক্য দেখা যায়। একে পরিবৃত্তি বলে।

প্রশ্ন-১৩। মেন্ডেলিজম কাকে বলে?

উত্তরঃ অস্ট্রিয়াবাসী ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল দীর্ঘ সাত বছর বিভিন্ন মটরশুটি গাছের উপর নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বংশগতি বিষয়ক যে দুটি সূত্র প্রদান করেন, সে সূত্র দুটিকে মেন্ডেলের সূত্র বা মেন্ডেলিজম বলে।

প্রশ্ন-১৪। মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিটেন্স কাকে বলে?

উত্তরঃ সামাজিকভাবে মেন্ডেলের সূত্র সমূহের তথা মেন্ডেলিজম এর গবেষণা ও ফলাফলকে মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিটেন্স বলে।

প্রশ্ন-১৫। বংশগতি কাকে বলে?

উত্তরঃ পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যসমূহ যে সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতিতে সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত বা স্থানান্তরিত হয় তাকে বংশগতি বলে।

ব্লাড গ্রুপ কাকে বলে?

উত্তরঃ লোহিত রক্তকণিকার প্লাজমা মেমব্রেন অবস্থিত বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ভিত্তিতে রক্তের শ্রেণিবিন্যাসকে ব্লাড গ্রুপ বলে।

জিন কি?

উত্তরঃ জিন হলো DNA অণুর এমন একটি খণ্ডিত অংশ যা এক অণু প্রোটিন সংশ্লেষণ এর জন্য প্রয়োজনীয় কোড বা সংকেত প্রদান করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, জীবের বংশগতি মৌলিক ও কার্যিক একক যা বংশান্তরে জীবের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক তাকে বলে। মেন্ডেলের  এদের ফ্যাক্টর (Factor) নাম দিয়েছিলেন।

লোকাস কী?

উত্তরঃ যে নির্দিষ্ট স্থানে জিন বা অ্যালিল ক্রোমোজোমে অবস্থান করে তাকে লোকাস বলে। অর্থাৎ ক্রোমোজোমে জিনের নির্দিষ্ট স্থান এর নাম লোকাস।

অ্যালিল বা অ্যালিলোমরফ কী?

উত্তরঃ কোনো জীবের নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত হোমোজাইগাস বা হেটারোজাইগাস জিনগুলোকে পরস্পরের অ্যালিল বলে। যেমন- TT (একই ধর্মী) ও Tt (বিপরীত ধর্মী) ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট লোকাসে অবস্থানকারী জিন যুগল যারা একে অপরের অ্যালিল বা অ্যালিলোমরফ।

হোমোজাইগাস কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল বা জিন দুটি একই ধর্মী হলে তাকে হোমোজাইগাস বলে। যেমন- লম্বা বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল TT বা খাটো বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল tt হলো হোমোজাইগাস জিনের উদাহরণ।

হেটারোজাইগাস কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো জীব একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল দুটি বিপরীতধর্মী বা অসমপ্রকৃতির হলে তাকে হেটারোজাইগাস জীব বলে। যেমন- Tt অ্যালিল ধারী জীবটি লম্বা হলেও তা হেটারোজাইগাস।

এপিস্ট্যাসিস কাকে বলে?

উত্তরঃ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিনকে যখন অন্য একটি নন-অ্যালিলিক জিন অবদমন করে তখন বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিনটি তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে না। এ ঘটনাকে এপিস্ট্যাসিস বলে।

জৈব বিবর্তন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে মন্থর গতিশীল প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক পরিবর্তন ও ক্রমিক রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্বপুরুষ অর্থাৎ সরল উদবংশীয় জীব থেকে নতুন ও অপেক্ষাকৃত জটিল জীবের উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ ঘটে, তাকে জৈব অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তন বলে।

সংকর জীব কাকে বলে?

উত্তরঃ দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মধ্যে প্রজনন সৃষ্ট সন্তানদের সংকর জীব বলে।

সংকর জীব সর্বদা হেটারোজাইগাস প্রকৃতির।

বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবদের সংকরায়ণ সৃষ্ট প্রথম সন্তানদের F1 জনু বা প্রথম সংকর পুরুষ বলে।

F1 জনুর সংকর জীবদের মধ্যে আন্তঃপ্রজননে সৃষ্ট জীবদের F2 জনু বা দ্বিতীয় সংকর পুরুষ বলে।

প্রছন্ন বৈশিষ্ট্য কি?

উত্তরঃ কোনো হেটারোজাইগাস জীবে বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জিনের মধ্যে যে জিনটির বৈশিষ্ট্য অপ্রকাশিত থাকে তাকে প্রচ্ছন্ন জিন এবং উক্ত জিনের বৈশিষ্ট্যকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন, Tt জিনোটাইপ বিশিষ্ট হেটারোজাইগাস মটরশুঁটি উদ্ভিদের t জিন এবং এর দ্বারা অপ্রকাশিত ‘ছোট’ বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্ন।

প্রকট বৈশিষ্ট্য কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো হেটারোজাইগাস জীবে বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জিনের মধ্যে যে জিনটির বৈশিষ্ট্য বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায় তাকে প্রকট জিন এবং উক্ত জিনের বৈশিষ্ট্যকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন – Tt জিনোটাইপ বিশিষ্ট হেটারোজাইগাস মটরশুঁটি উদ্ভিদের T জিন এবং এর দ্বারা প্রকাশিত ‘লম্বা’ বৈশিষ্ট্য প্রকট।

ব্যাক ক্রস কাকে বলে?

উত্তরঃ 1 জণুর জীব এবং তার মূল পিতৃ-মাতৃর মধ্যে অথবা পিতৃ-মাতৃর অনুরূপ জিনোটাইপ বহনকারী কোনো জীবের মধ্যে সংঘটিত ক্রসকে ব্যাক ক্রস বলে। যেমন- AaBb × AABB অথবা AaBb × aabb।

টেস্ট ক্রস কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো জীব হোমোজাইগাস না হেটারোজাইগাস তা জানার জন্য ঐ জীবের সাথে একই বৈশিষ্ট্যের জিন উপাদান বিশিষ্ট প্রচ্ছন্ন অ্যালীল বহনকারী আরেকটি জীবের ক্রসকে টেস্ট ক্রস বলে। যেমন- AABB×aabb = AaBb(F1) অথবা AaBb × aabb।

দ্বি-সংকর ক্রস বা ডাইহাইব্রিড ক্রস কাকে বলে?

উত্তরঃ জিনতত্ত্বের কোনো পরীক্ষায় যখন দুইজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে ক্রস বা সংকরায়ণ ঘটানো হয় তখন তাকে দ্বি-সংকর ক্রস বা ডাইহাইব্রিড ক্রস বলে। যেমন – হলুদ বর্ণ ও গোলাকৃতির বীজ বিশিষ্ট মটরশুঁটি উদ্ভিদের সাথে সবুজ বর্ণ ও কুঞ্চিত বীজ বিশিষ্ট মটরশুঁটি উদ্ভিদের ক্রস।

এক সংকর ক্রস বা মনোহাইব্রিড ক্রস কাকে বলে?

উত্তরঃ জিনতত্ত্বের কোনো পরীক্ষায় যখন একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে সংকরায়ণ বা ক্রস ঘটানো হয় তখন তাকে এক সংকর ক্রস বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। যেমন- বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ খাটো মটরশুঁটি উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস।

টেস্ট ক্রস মাত্রেই ব্যাক ক্রস কেন?

উত্তরঃ ব্যাক ক্রসে যখন প্রচ্ছন্ন জীব ব্যবহৃত হয় কেবল তখনই সেই ক্রসকে টেস্ট ক্রস বলে। এক্ষেত্রে সংকর লম্বা গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ বেটে গাছের সংকরায়ন ঘটে। তাই বলা যায় যে টেস্ট ক্রস মাত্রেই ব্যাক ক্রস।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *