পাবনায় গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে পোস্টম্যান উধাও

পোস্ট অফিসে নগদ এর নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে।

তার বাড়ি জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে টাকা ফেরত দেবার দাবি জানিয়ে সাগরকান্দি সাব-পোস্ট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

খবর পেয়ে পাবনা প্রধান ডাকঘরের কর্মকর্তারা গিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের টাকা পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের নিকট থেকে নিয়ে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত সেই অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রতিদিন সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের সামনে ভিড় করছেন প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল।

প্রতারণার শিকার স্থানীয় গ্রামের প্রদীপ কুন্ডু নামে এক গ্রাহক জানান, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে গত ২ মাস আগে আমি ৮ লাখ টাকা রাখতে গেলে পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাকে বলেন- নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেবার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড (নগদ) নামে সরকার আরেকটি সংস্থা চালু করছেন। তাদের সেই কথা সত্যি ভেবে সরল বিশ্বাসে আমি তাদের হাতে টাকা দিয়েছিলাম। এ সময় পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট অফিসের লোগো যুক্ত একটি টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য নগদ-এ মার্চেন্ট নামক একটি পাশ বহি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী মানিক মোল্লা নামে অপর এক গ্রাহক বলেন, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে গত মাসে ৩ লাখ টাকা জমা রাখতে গেলে পোস্ট অফিসের পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড (নগদ) সংস্থায় টাকা রাখলে সরকার এক লাখে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে লাভ প্রদান করছে বলে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমার থেকে টাকা নেন। এ সময় তিনি আমাকে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭(৩৪২)২০০৪ এর একটি টোকেন হাতে দেন।

একই ধরণের অভিযোগ করেন বুলু খাতুন, মো. খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, হুলুফা খাতুনসহ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

সাগরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিন আগে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সাবপোস্ট অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে পারি। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছেন- পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল।

এদিকে এ ঘটনার পরপরই সাগরকান্দি সাব-পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া সাব-পোস্ট অফিসে এবং সাতবাড়িয়া সাব-পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলামকে সাগরকান্দি সাব-পোস্ট অফিসে বদলি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সাগরকান্দি সাব-পোস্ট অফিসের নতুন পোস্টমাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোস্টম্যান নূর হোসেন কোথায় আছে আমি জানিনা। তবে গ্রাহকের বই হাতে নিয়ে বলেন, এই সব বই ডাক বিভাগের না, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযুক্ত অপর পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দাবি করেন, আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না।

এ বিষয়ে পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে পোস্ট অফিসের সঙ্গে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ এর কোনো ধরণের সম্পর্ক নেই। বইতে নগদের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *