অষ্টম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ছেলেকে পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ-খবর জিজ্ঞেস করলে ছেলে বিরক্ত হয়ে মাকে বলল, আমি পড়ালেখার বিষয়ে এত হিসাব দিতে পারব না। মা বললেন, এমন একদিন আসবে যখন তুমি সব কিছুরই হিসাব দিতে বাধ্য হবে। হিসাব রাখতে পারা একটি বিশেষ গুণ। অপরদিকে মনীষা তার শিক্ষকের কাছে জানতে চাইল— যেভাবে দিন দিন নিত্য নতুন সমস্যা ধরা পড়ছে, সেক্ষেত্রে আল্লাহ যদি নতুন করে মুজিযা ও ওহিসহকারে কোনো মহামানব প্রেরণ না করেন, তাহলে এর সমাধান কীভাবে হবে? শিক্ষক বললেন, মহামানব প্রেরণের ধারাটি সমাপ্ত হয়েছে। আর ইসলামে সব সমস্যা সমাধানের উপায় আছে।

ক. ‘সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ কে?

খ. ‘সেখানে মন যা চায় তাই পাবে’— ব্যাখ্যা করো।

গ. মা ছেলেকে কোন গুণে গুণান্বিত হতে বলেছেন? ব্যাখ্যা দাও।

ঘ. মনীষা ও তার শিক্ষকের আলোচনায় যে বিষয়টি ফুটে ওঠেছে, তা চিহ্নিতপূর্বক সে বিষয়ে তোমার মতামত বিশ্লেষণ।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ হলেন হযরত মুহাম্মদ (স)।

খ. জান্নাতবাসীদের জন্য জান্নাতে সব ধরনের নিয়ামত বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে ইমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল তৈরি করে রেখেছেন তাকে জান্নাত বলা হয়। জান্নাতের ঘর-বাড়ি, আসন, আসবাবপত্রসহ সবকিছু স্বর্ণ-রৌপ্য, মনিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। সেখানে থাকবে মিষ্টিপানির স্রোতধারা। বস্তুত আনন্দ উপভোগের সব রকমের জিনিসই জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে। এরই সপক্ষে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে তোমাদের মন যা চাইবে তা-ই তোমাদের জন্য রয়েছে, আর তোমরা যা দাবি করবে তাও তোমাদের দেওয়া হবে।’ (সূরা হামীম আস সাজদাহ, আয়াত-৩১)

গ. মা ছেলেকে আখিরাতে বিশ্বাসের গুণে গুণান্বিত হতে বলেছেন।

আখিরাত হলো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। বাংলায় একে পরকাল বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তাই আখিরাত। এখানে মানুষের পার্থিব জীবনের সব কাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। আর এ হিসাবের ভয় মানুষকে দুনিয়াতে সৎকর্মশীল করে তোলে। উদ্দীপকে এরই ইঙ্গিত লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের মা যখন ছেলের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন তখন ছেলে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, সে এসবের হিসাব নিকাশ দিতে পারবে না। তখন মা তার ছেলেকে এমন এক দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন যেদিন সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। নিঃসন্দেহে মা আখিরাতের হিসাব-নিকাশের কথা বুঝিয়েছেন। কারণ আখিরাতে মানুষকে মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। দুনিয়ার সব কাজ-কর্মের হিসাব দিতে হবে। আখিরাতের এ হিসাব নিকাশের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারলে মানুষের দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। কোনোরূপ অবহেলার জীবন অতিবাহিত হয় না।

সুতরাং বলা যায়, মা ছেলেকে মূলত আখিরাতের প্রতি দৃষ্টিপাত দিয়ে তার গুণে গুণান্বিত হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।

ঘ. মনীষা ও তার শিক্ষকের আলোচনায় খতমে নবুয়তের বিষয়টি ফুটে ওঠেছে।

খতমে নবুয়ত অর্থ নবুয়তের সমাপ্তি বা নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। এ ক্রমধারার শুরু হযরত আদম (আ) এর মাধ্যমে এবং শেষ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে। উদ্দীপকে এ আলোচনাই ফুটে ওঠেছে।

উদ্দীপকের মনীষা পার্থিব জীবনের নতুন নতুন সমস্যা দেখে এর সমাধানের কথা চিন্তা করে। তার ধারণা এসব সমস্যা সমাধানে নতুন পৃথিবীতে আরও মহামানব আগমন করবেন। মনীষার এ ধারণা সঠিক নয়। তার শিক্ষক তাকে নবুয়তের পরিসমাপ্তি এবং পবিত্র কোরআনে যে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে সে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন। বাস্তবিক অর্থে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশেষ নবি। তাঁর মাধ্যমে নবুয়তের ক্রমধারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কুরআন-হাদিসের বহু স্থানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি তো আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবি।’ (সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪০) তাছাড়া নবিজি (স) নিজে ইরশাদ করেন, ‘আমিই শেষ নবি। আমার পরে আর কোনো নবি আসবেন না।’ (সহিহ মুসলিম) অপরদিকে আল-কুরআন একটি যুগোপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ ঐশী গ্রন্থ। এটি সব সময়ের সব মানুষের এবং সব সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান গ্রন্থ। সুতরাং পবিত্র কুরআনে যেহেতু সব সমস্যার সমাধান বিদ্যমান, তাই নতুন কোনো মহামানব তথা নবি-রাসুল আগমনের কোনো প্রয়োজন নেই। অতএব বলা যায়, হযরত মুহাম্মদ (স) এর আগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে এবং পবিত্র কুরআনে সকল সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে।

প্রশ্ন-২. লিয়াকত ও জহুর দুই বন্ধু। লিয়াকত মুখে আল্লাহকে স্বীকার করে ও অন্তরে বিশ্বাস করে। কিন্তু আসলে তার দৈনন্দিন জীবনে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সে বলে, অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করলেই হলো। অপরদিকে, জহুর কমিউনিটি হাসপাতালের ওষুধপত্র সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। সে হাসপাতালের ওষুধ গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেয় এবং মানুষের সঙ্গে কথা দিয়ে কথা রক্ষা করে না।

ক. ‘মুহাইমিনুন শব্দের অর্থ কী?

খ. আকাইদ বলতে কী বোঝায়?

গ. জহুরের কর্মকাণ্ডে কী ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. লিয়াকত কী প্রকৃত ইমানদার? পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মুহাইমিনুন শব্দের অর্থ নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, আশ্রয়দাতা।

খ.  ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাস করার নামই হলো আকাইদ। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথমে মৌলিক কতিপয় বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। যেমন: আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এগুলোই আকাইদ।

গ. জহুরের কর্মকাণ্ডে নিফাকের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলে। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। তারা যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং কোনো জিনিস আমানত রাখলে তা খিয়ানত করে। জহুরের কর্মকাণ্ডেও তা প্রকাশ পেয়েছে। সে হাসপাতালের ওষুধ গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেয় যা তার কাছে আমানত ছিল; এছাড়া মানুষের সঙ্গে কোনো কথা দিলেও তা রক্ষা করে না। তার এ লক্ষণগুলো মুনাফিকেরই নিদর্শন। তাই উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, জহুরের কর্মকাণ্ডে নিফাকের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. লিয়াকত প্রকৃত ইমানদার নয়। ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদানুযায়ী আমল করার নাম হলো ইমান। কেউ যদি শুধু অন্তরে বিশ্বাস করে, কিন্তু মুখে স্বীকার না করে তবে সে প্রকৃতপক্ষে ইমানদার বা মুমিন হিসেবে গণ্য হয় না। আবার মুখে স্বীকার করে অন্তরে বিশ্বাস না করলেও কোনো ব্যক্তি ইমানদার হতে পারে না। এমনকি মুখে স্বীকার, অন্তরে বিশ্বাস করলেও তদানুযায়ী কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে ইমানদার বলা যাবে না। বস্তুত আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমলের সমষ্টিই হলো প্রকৃত ইমান।

উদ্দীপকের লিয়াকতের মধ্যে ইমানের সেরকম কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না। লিয়াকত মুখে আল্লাহকে স্বীকার এবং অন্তরে বিশ্বাস করে কিন্তু আমলে তার কোনো প্রতিফলন নেই।

যদি কথা ও কাজ এক রকম হতো তবে তাকে খাঁটি ও প্রকৃত ইমানদার বলা যেত। যেহেতু তার কথা ও কাজে মিল নেই তাই তাকে প্রকৃত ইমানদার বলা যায় না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *